স্টাফ রিপোর্টার ::
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা ও সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহসভাপতি মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরীর (৫২) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় জেলায় নেমে এসেছে শোক ও ক্ষোভের ছায়া। নিখোঁজের তিন দিন পর শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে দিরাই উপজেলার শরিফপুর বাট্টা এলাকায় মরা সুরমা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের উদ্যোগে সুনামগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, একজন শান্তিপ্রিয় আলেমকে নির্মমভাবে হত্যা করা কোনো সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না।
হত্যাকান্ডের চারদিন অতিক্রান্ত হলেও খুনীদের গ্রেপ্তার না হওয়ায় বক্তারা প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন নেতারা।
সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন জেলা জমিয়তের সহসভাপতি মাওলানা আবুল ফজল, মাওলানা আব্দুল কাদির, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী, জেলা খেলাফত মজলিসের নির্বাহী সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোহন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আখতার হোসাইন, ইসলামি আন্দোলনের সভাপতি মুফতি শহিদুল ইসলাম পলাশী, জেলা জমিয়তের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা রুকন উদ্দীন, সাংগঠনিক স¤পাদক মাওলানা রফিক আহমদ উলাশনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সহ-সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুর রহমান সাজাওয়ার, মাওলানা মুখলিছুর রহমান। জমিয়ত নেতা মাওলানা আরশাদ নোমান ও মাওলানা ত্বোহা হোসাইনের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা জমিয়ত নেতা মাওলানা নুরুল মুত্তাকিন, মাওলানা নাজমুল ইসলাম জাহিদ, সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রমজান হোসাইন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হাই, সুনামগঞ্জ পৌরসভা সাধারণ স¤পাদক মুফতি মুবাশ্বির আলী, মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা আলীনুর আহমদ আলহাদী, যুবনেতা আসআদ আহমদ, ছাত্রনেতা সোহাইল আহমদ ইয়াহইয়া প্রমুখ।
একই দিনে জেলার শান্তিগঞ্জ, দিরাই, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও অন্যান্য উপজেলায় পৃথক বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচিতে ইসলামি সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন। শনিবার দিরাই বাজারে উপজেলা বিএনপি ও জমিয়তের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। বক্তারা মাওলানা মুশতাককে একজন সহজ-সরল আলেম হিসেবে উল্লেখ করে তার হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দাবি জানান। ওইদিন দুপুরে দিরাই বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে থানা পয়েন্টে সমাবেশে মিলিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জমিয়তের উপদেষ্টা প্রবীণ আলেমেদীন মাওলানা হোসাইন আহমেদ, উপজেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা মহি উদ্দিন কাসেমী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুখতার হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা আবিদুর রহমানসহ জমিয়ত ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এদিকে শনিবার দুপুরে জমিয়ত, যুব জমিয়ত ও ছাত্র জমিয়ত শান্তিগঞ্জ উপজেলা শাখার আয়োজনে শান্তিগঞ্জ বাজারে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচিতে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহন করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে শান্তিগঞ্জ উপজেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা ইলিয়াছ আহমদের সভাপতিত্বে ও হাফিজ আবু সাইদ-এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হাই, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস শান্তিগঞ্জ শাখার সভাপতি কাজী মোহাম্মদ জমিরুল ইসলাম মমতাজ, প্রবীণ ব্যক্তিত্ব মনসুর আলী, সদর জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রমজান হোসাইন, আব্দুল্লাহ গাজীনগরী, শান্তিগঞ্জ উপজেলা যুব জমিয়তের সভাপতি গাজী আবুল কালাম, জয়কলস জামে মসজিদের ইমাম আব্দুর রাজ্জাক, আরশদ নোমান, ছাত্র জমিয়ত সভাপতি মাওলনা ছালিক বিন রফিক সহ যুব জমিয়ত ও ছাত্র জমিয়তের নেতৃবৃন্দ। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ক্বারী সিরাজুল ইসলাম'র দোয়ার মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ সমাপ্ত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরী একজন আলেমে দ্বীন ছিলেন। তার হত্যাকা- পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে। খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, খুনিদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। অপরদিকে, রবিবার বিকেলে মাওলানা মুশতাক আহমেদের রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের মদনপুর পয়েন্ট অবরুদ্ধ করেন বিক্ষুব্ধ জমিয়তের নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা। ওইদিন বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের দুই দিকে বাঁশ ও গাছের গোড়া ফেলে রেখে যানবাহন চলাচাল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি তিন রাস্তার মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। ফলে শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে এবং ভোগান্তি পোহান যাত্রীরা। বিকাল ৫টায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। এই কর্মসূচিতে অংশ নেন বড়মোহা দারুল উলুম ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী। বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের জমিয়ত প্রার্থী মাওলানা হাম্মাদ আহমেদ গাজিনগরী বলেন, মুশতাক গাজিনগরী একজন সুপরিচিত আলেম। তাকে গুম করে হত্যার ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছেন না। স্বেচ্ছায় জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছেন। পুলিশ বার বার আশ্বাস দিলেও খুনিদের গ্রেপ্তার করছে না। আমরা প্রশাসনের আশ্বাসে এখন আর বিশ্বাসী হতে পারছি না। সোমবার সূর্যোদয়ের আগে খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে দেশব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। জেলা জমিয়তের সাধারণ স¤পাদক মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরী বলেন, মুশতাক গাজিনগরীকে গুম করার পর হত্যা করে নদীতে ফেলা হয়। প্রশাসন খুনিদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসন বার বার আশ্বাস দেয় কিন্তু খুনিরা গ্রেপ্তার হয় না। এমন টালবাহানা বরদাশত করা হবে না। আমরা আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা মুশতাক গাজিনগরীর লাশ পাওয়ার পর খুনিদের ধরতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ দেশে একজন আলেমও নিরাপদ নয়। লন্ডন জমিয়ত প্রচার সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ -৪ আসনের জমিয়ত প্রার্থী মাওলানা মোখলেছুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত। একজন নিরপরাধ আলেমকে খুন করা হলো অথচ পুলিশ খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। খুনিদের বিচার না হলে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটতেই থাকবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিরপরাধ মানুষকে খুনের জন্য হয়নি। খুনিদের শনাক্ত করা না হলে আপনারা ছাড় পাবেন না। উল্লেখ্য, মুশতাক আহমদের বাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলা গাজীনগর গ্রামে। তিনি উপজেলার বড়মোহা দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজের তিন দিন পর গত শুক্রবার সকালে দিরাই উপজেলার শরিফপুর বাট্টা এলাকায় মরা সুরমা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর স্ত্রী সৈয়দা রুবি বেগম জানান, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে মুশতাক আহমদ স্থানীয় পাথারিয়া বাজারে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর রাত ১০টার দিকে তাঁদের একমাত্র সন্তান সাজিদা বেগমকে ফোন করে মুশতাক জানান, তিনি সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গেছেন। ঘণ্টাখানেক পর বাড়িতে ফিরবেন। কিন্তু রাত ১২টার দিকে বাড়ি না ফেরায় তাঁরা মুশতাকের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর বিভিন্ন স্থানে তাঁর খোঁজ করা হয়; কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় থানায় একটি জিডি করেন রুবি বেগম। শুক্রবার সকালে মুশতাক আহমদের লাশ স্থানীয় লোকজন দিরাইয়ের মরা সুরমা নদীতে ভাসতে দেখে পুলিশে খবর পাঠান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
জমিয়ত নেতা মুশতাক আহমদের মরদেহ উদ্ধার
ক্ষোভ-শোক-প্রতিবাদে ফুঁসছে জনতা
- আপলোড সময় : ০৮-০৯-২০২৫ ০৯:২৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৮-০৯-২০২৫ ০৯:২৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ